কুয়াকাটা ভ্রমন গাইড, কুয়াকাটা কিভাবে যাবেন, কুয়াকাটা যাওয়ার খরচ, kuakata kivabe jabo..2019
সাগর কন্যা কুয়াকাটা
কক্সবাজার সি বিচ দেখতে দেখতে যারা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন তাদের জন্য এই সেনসেশনাল ডেস্টিনেশন। যারা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত নিজ চোখে দেখতে চান তাদের জন্য এই ট্যুর।যারা শুটকি কিভাবে প্রসেসিং করে দেখতে চান তারা দেখতে পাবেন কুয়াকাটায় গেলে, শুটকি পল্লী নামে আলাদা একটা পল্লী আছে এইখানে।
যারা বিভিন্ন ছুটিতে ঢাকা থেকে সাগরকন্যা কুয়াকাটায় বেড়িয়ে আসতে চান, তাদের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য :
কুয়াকাটা
সাগর কন্যা
|
|
সৈকত
|
|
দেশ
|
|
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে কি কি উপায়ে কুয়াকাটা যাওয়া যায় :
বাসে করে ডাইরেক্ট কুয়াকাটা
কোথা থেকে বাস ছাড়ে,
বাসের সময়সূচি..
বাস ভাড়া :-
Bus Name
|
Destination
|
Type
|
Rent
|
Sakura
Paribahan
|
Kuakata
|
Non AC
|
700 TK.
|
Kuakata
Express
|
Kuakata
|
Non AC
|
500 TK.
|
Hanif
Enterprize
|
Kuakata
|
Non AC
|
750 TK.
|
Sakura
Paribahan
|
Kuakata
|
AC
|
1000 TK.
|
Surovi
Poribohon
|
Kuakata
|
AC
|
1000 TK.
|
Sakura
Paribahan
|
Kuakata
|
AC
|
1100 TK.
|
Kanak
Paribahan
|
Kuakata
|
AC
|
1100 TK.
|
আপনি এসব বাসে গেলে আপনাকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের সামনেই নামিয়ে দিবে। ‘সাকুরা’ পরিবহনের বাসটা ভালো সার্ভিস দেয়, গাবতলী থেকে ছাড়ে। ঢাকা থেকে ছাড়ে রাত ৯টার দিকে, তবে কুয়াকাটা থেকে ঠিক সন্ধ্যা ৬.৩০ এ, এর পর গেলে বাস মিস করবেন।
ঢাকা থেকে কুয়াকাটা বাসে যেতে মোট সময় লাগে প্রায় ১৩ ঘন্টা তবে কুয়াকাটা থেকে আসতেসময় লাগে প্রায় ১১ঘন্টা।
তাছাড়া সোনারতরী,গোল্ডেনলাইন সহ অনেক বাস গাবতলী থেকে কলাপাড়া যায়, সেখান থেকেও বাস অথবা অটোতে কুয়াকাটা যেতে পারবেন। সার্ভিস ভালো। মিরপুর অথবা উত্তরার মানুষ জন ঈগলে করে কলাপাড়া যেতে পারবেন।
লঞ্চে করে পটুয়াখালী বা বরিশাল হয়ে বাস বা মটর সাইকেলে করে কুয়াকাটা : -
লঞ্চ দিয়ে ভায়া পটুয়াখালি হয়ে যাওয়ার উপায়--
লঞ্চ সার্ভিস :-
·
কুয়াকাটা ১,
·
সুন্দরবন ৯/১১,
·
জামাল ৫,
·
কাজল ৭
ইত্যাদি লঞ্চ ছেড়ে যায়। সবদিন সব লঞ্চ পাবেন না কারন এগুলো একদিন ঢাকা থেকে ছেড়ে ফিরে আসে পরদিন।
সময়সূচি :-
সন্ধ্যা ৬টা ৩০ থেকে ৭টা ৩০ এর দিকে
ভাড়া:=
কেবিন
|
লঞ্চ ভাড়া
|
ডেক
|
১৮০ টাকা
|
সিঙ্গেল কেবিনে
|
৯০০ টাকা
|
ডাবল কেবিনে
|
১৬০০ টাকা,
|
ভিআইপি
|
৪৫০০টাকা
|
কতক্ষন লাগে :- ১১ -১২ ঘন্টা ।
লঞ্চ অনেক ভালো একটা অপশন, আগে থেকে বুকিং দিয়ে না রাখলে কেবিন পাবেন না।৫টা৩০ থেকে ৬টা৩০ পর্যন্ত সৈকত, বাগেরহাট ২ নামের গলাচিপার কিছু লঞ্চ ছাড়ে যেগুলো ভায়া পটুয়াখালি হয়ে যায়। ভুলেও উঠবেননা। আগে ছাড়লেও সব ঘাট ধরে সবার পরে পৌছাবে।
লঞ্চ দিয়ে সকালে (৬টা-৭টা) পটুয়াখালী নেমে একটা রিক্সা(ভাড়া ৩০ টাকা) বা অটো (জনপ্রতি ২০টাকা) নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে চলে আসতে হবে।
সেখানে খাওয়া দাওয়ার দোকান নাই
:( তবে সকালের নাস্তা খেতে হলে আপনাকে একটু পিছিয়ে চৌরাস্তার মোড়ে যেতে হবে, সেখানে ভালো কিছু পরটা পাবেন, হোটেলগুলোর মান একদমই ভালো না।
এখান থেকে (চৌরাস্তা) মোটর সাইকেল পাওয়া যায়, এক মোটর সাইকেলে ২ জন জাত্রী বসা যাবে, ডাইরেক্ট কুয়াকাটা পর্যন্ত ভাড়া নিবে ৬০০-৮০০ টাকা (তুমুল দরদাম করতে হবে)।
সময় লাগবে প্রায় আড়াই ঘন্টা।
আর যারা মোটর সাইকেল দিয়ে যেতে চান না, তারা বাসে করে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে আবার আপনাদেরকে বাস স্ট্যান্ডে আসতে হবে, কুয়াকাটার বাসের টিকিট কাটতে হবে, ভাড়া নিবে ১৫০ টাকা।
পটুয়াখালি থেকে কলাপাড়া পর্যন্ত রাস্তা অসাধারণ, রীতিমতন বিমান নামতে পারবে এমন, রানওয়ের মতন চকচকে। কলাপাড়া পার হলেই সামনে পড়বে একটা ফেরী, জান পানি করা মিশনের শুরু এখানেই
:( হেলতে দুলতে ঝাঁকি খেতে খেতে, আর তিনটা ফেরীতে অপেক্ষা করতে করতে কুয়াকাটা পৌঁছাতে সময় লেগে যাবে ২.৫ থেকে ৩.৫ ঘন্টার মতন।
লঞ্চ দিয়ে ভায়া বরিশাল হয়ে কিভাবে যাওয়া যায় :-
বরিশাল থেকে কুয়াকাটাঃ
ঢাকা থেকে বরিশাল এর লঞ্চ গুলো রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে সদর ঘাট থেকে ছাড়ে। এর মধ্যে
·
সুন্দর বন ৭/৮,
·
সুরভী৮,
·
পারাবত ১১,
·
কীর্তনখোলা ১/২
লঞ্চ গুলো ভাল।
লঞ্চ গুলো বরিশাল পৌঁছায় ভোর ৫টার দিকে।
· ডেক ভাড়া ১৫০ টাকা,
· ডাবল কেবিন ১৬০০ টাকা,
· ভিআইপি ৪৫০০ টাকা।
বরিশাল থেকে সরাসরি কুয়াকাটা যাওয়ার বাস ভাড়া ২২০ টাকা;
৪টা ফেরি পার হতে হবে, সময় লাগবে ৪-৫ ঘন্টা।
বরিশাল থেকে মাইক্রো বাস ভাড়া করে সরাসরি কুয়াকাটা পৌঁছানো সম্ভব। সেইক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বেশী পরবে।
দামাদামি করলে ৩৫০০টাকার মধ্যে ভাড়া পাওয়া সম্ভব।সময় লাগবে ৩-৪ঘন্টা।
আনান্য স্থান থেকে কুয়াকাটা যাবার ব্যবস্থা :--
সৌদিয়ার বাস চট্টগ্রাম থেকে কলাপাড়া যায়।
খুলনায় আসার অনেক ভালো বাস পাওয়া যাবে।
খুলনা থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে সকাল ৭ টায় একটি বিআরটিসি বাস ছাড়ে।
খুলনা থেকে যেতে সময় লাগে প্রায় ৭/৮ ঘন্টা।
খুলনা থেকে বাসভাড়া ২৭০ টাকা।
উত্তরবঙ্গ থেকে আসতে চাইলে সৈয়দপুর থেকে খুলনা পর্যন্ত রূপসা অথবা সীমান্ত আন্তঃনগর ট্রেনে করে আসতে পারবেন। রাত্রের টেনে আসলে সকাল ৭ টার বিআরটিসি বাসে করে কুয়াকাটা যেতে পারবেন।
রাস্তা-ঘাটের কি অবস্থা :--
পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত রাস্তা বিশ্বমানের। আর বরিশাল হয়ে গেলে, বরিশাল থেকে পটুয়াখালি পর্যন্ত রাস্তা খুব একটা সুবিধার না, তবে একেবারে খারাপ ও না।
কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থান
কি কি?
সমুদ্র সৈকত
কুয়াকাটার বেলাভূমি বেশ পরিচ্ছন্ন। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এ সৈকত থেকেই কেবল সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। সৈকতের পূর্ব প্রান্তে গঙ্গামতির বাঁক থেকে সূর্যোদয় সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায়। আর সূর্যাস্ত দেখার উত্তম জায়গা হল কুয়াকাটার পশ্চিম সৈকত।
কুয়াকাটার সৈকত প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। সৈকত লাগোয়া পুরো জায়গাতেই আছে দীর্ঘ নারিকেল গাছের সারি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে এ বনেও। বিভিন্ন সময়ে সমুদ্রের জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনের কবলে পড়েছে সুন্দর এই নারিকেল বাগান। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সারা বছরই দেখা মিলবে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য।
শুঁটকি পল্লী
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে আছে জেলে পল্লী। এখানে প্রচুর জেলেদের বসবাস। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এখানে চলে মূলত শুঁটকি তৈরির কাজ। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে এনে সৈকতেই শুঁটকি তৈরি করেন জেলেরা। কম দামে ভালো মানের শুঁটকিও কিনতে পাওয়া যায় এখানে।
গঙ্গামতির জঙ্গল :--
কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত শেষ হয়েছে পূর্ব দিকে গঙ্গামতির খালে। এখান থেকেই শুরু হয়েছে গঙ্গামতির জঙ্গল। অনেকে একে গজমতির জঙ্গলও বলে থাকেন। নানান রকম বৃক্ষরাজি ছাড়াও এ জঙ্গলে আছে বিভিন্ন রকম পাখি, বন মোরগ-মুরগি, বানর ইত্যাদি।
ক্রাব আইল্যান্ড
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূবদিকে গঙ্গামতির জঙ্গল ছাড়িয়ে আরও সামনে গেল আছে ক্রাব আইল্যান্ড বা কাঁকড়ার দ্বীপ। এ জায়গায় আছে লাল কাঁকড়ার বসবাস। নির্জনতা পেলে এ জায়গার সৈকত লাল করে বেড়ায় কাঁকড়ার দল। ভ্রমণ মৌসুমে (অক্টোবর-মার্চ) কুয়াকাট সমুদ্র সৈকত থেকে স্পিড বোটে যাওয়া যায় ক্রাব আইল্যান্ডে।
ফাতরার বন
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম পাশে নদী পার হলেই সুন্দরবনের শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল, নাম তার ফাতরার বন। সুন্দরবনের সব বেশিষ্ট এ বনে থাকলেও নেই তেমন কোন হিংস্র প্রাণী। বন মোরগ, বানর আর নানান পাখি আছে এ বনে। কদাচিৎ এ বনে বুনো শুকরের দেখা মেলে। কুয়াকাটা থেকে ফাতরার বনে যেতে হবে ইঞ্জিন নৌকায়।
কুয়াকাটার কুয়া
কুয়াকাটা নামকরণের ইতিহাসের পেছনে যে কুয়া সেটি এখনও টিকে আছে। তবে কয়েক বছর আগে অদূরদর্শী ও কুরুচিকর সংস্কারের ফলে এর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কাছে রাখাইনদের বাসস্থল কেরাণিপাড়ার শুরুতেই প্রাচীন কুয়ার অবস্থান।
জনশ্রুতি আছে ১৭৮৪ সালে বর্মী রাজা রাখাইনদের মাতৃভূমি আরাকান দখল করলে বহু রাখাইন জায়গাটি ছেড়ে নৌকাযোগে আশ্রয়ের খোঁজে বেড়িয়ে পড়েন। চলতি পথে তারা বঙ্গোপসাগরের তীরে রাঙ্গাবালি দ্বীপের খোঁজ পেয়ে সেখানে বসতি স্থাপন করেন। সাগরের লোনা জল ব্যবহারের অনুপযোগী বলে মিষ্টি পানির জন্য তার এখানে একটি কূপ খণন করেন। এরপর থেকে জায়গাটি কুয়াকাটা নামে পরিচিতি পায়।
সীমা বৌদ্ধ মন্দির
কুয়াকাটার প্রাচীন কুয়ার সামনেই সীমা বৌদ্ধ মন্দির। কাঠের তৈরি এই মন্দির কয়েক বছর আগে ভেঙে দালান তৈরি করা হয়েছে। তবে মন্দিরের মধ্যে এখনও আছে প্রায় ৩৭ মন ওজনের প্রাচীন অষ্টধাতুর তৈরি বুদ্ধ মূর্তি।
কেরানিপাড়া
সীমা বৌদ্ধ মন্দির থেকে সামনেই ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী রাখানদের আবাসস্থল কেরানিপাড়া। এখানকার রাখাইন নারীদের প্রধান কাজ কাপড় বুণন। রাখাইনদের তৈরি শীতের চাদর বেশ আকর্ষণীয়।
মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির
কুয়াকাটা সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায় রাখাইনদের একটি গ্রামের নাম মিশ্রিপাড়া। এখানে আছে বড় একটি বৌদ্ধ মন্দির। কথিত আছে এ মন্দিরের ভেতরে আছে উপমাহাদেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তি। এছাড়া এখান থেকে সামান্য দূরে আমখোলা গ্রামে আছে এ অঞ্চলে রাখাইনদের সবচেয়ে বড় বসতি।
মেরিন জাদুঘর
বাংলাদেশের প্রথম মেরিন জাদুঘর কুয়াকাটায় অবস্থিত। এখানে সংরক্ষিত আছে ২০০ বছরের
পুরাতন নৌকা। কুয়াকাটার ঝাউবন পয়েন্টের বেলাভূমিতে একটি বিশাল নৌকা জেগে ওঠে। স্থানীয়রা এটাকে সোনার নৌকা বলত। পুরো নৌকাটা সোনালি পাত দিয়ে মোড়ানো ছিল। কথিত আছে প্রায় ২০০ বছর আগে একদল বণিক অনেকগুলো বড় নৌকা নিয়ে এসে ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। নৌকাটিকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় প্রায় ৬ কি.মি. অস্থায়ী রেললাইন তৈরি করে
কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টে নিয়ে আসা হয়। শ্রী-মঙ্গল বৌদ্ধবিহারের পাশে জাদুঘরটি স্থাপন করা হয়।
ইকোপার্ক
ইকোপার্ক ও জাতীয় উদ্যান
সমুদ্র সৈকতের একেবারে কোল ঘেঁষে প্রায় ২০০
একর জায়গায় ষাটের দশকে পরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা নারিকেল কুঞ্জ, ঝাউ বন,
গঙ্গামতি সংরক্ষিত বন , পশ্চিমদিকের ফাতরার বন ও মহিপুরের রেঞ্জের বনাঞ্চল
নিয়ে গড়ে উঠেছে ইকোপার্ক ও জাতীয় উদ্যান । সমুদ্রের অব্যাহত ও অপ্রতিরোধ্য
ভাঙ্গনে ইতিমধ্যেই নারিকেল কুঞ্জ অনেক খানিই বিলীন হয়েছে ।
কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান লেক
এর পূর্ব দিকে
বনবিভাগ কর্তৃক ১৫ হেক্টর বেলাভূমিতে তৈরি করা হয়েছে মনোলোভা ঝাউবন । মানব
সৃষ্ট হলেও গোধূলি বেলায় সমুদ্র সৈকতে দাড়িয়ে ও বিশেষ করে পূর্ণ
চন্দ্রালোকিত জ্যোৎস্না রাতে যখন বেলাভূমি থেকে নারিকেল বীথি ও ঝাউ বাগানের
দিকে দৃষ্টি নিপতিত হয় তখন নিতান্ত বেরসিক দর্শকের কাছেও তা এক অমলিন
স্বর্গীয় আবেদন সৃষ্টি করে । আর দিনে ঝাউবনের ভিতর দিয়ে যখন সমুদ্রের
নির্মল লোনা বাতাস বয়ে যায় তখন বাতাসের শোঁ শোঁ আওয়াজ এক নিরবচ্ছিন্ন
ঐক্যতান করে শ্রোতার কানে আনে অনির্বচনীয় মাদকতা।
লেবুর বন
কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিম দিকের শেষ প্রান্তে এই লেবুর বন। লেবুর
বন থেকে তিন নদীর মোহনা দেখা যায়। এক পাশে সমুদ্র আরেক
পাশে তিন নদীর মোহনা, অপর পাশে উপকূলীয় বন, নদীর ওপারে দেখা যায় ফাতরার
বন সব মিলিয়ে জায়গা টা অসাধারণ। বাইকে করেই ঘুরে আসতে পারবেন সহজেই। তাছাড়া এখানে কিছু সামুদ্রিক “ফিস-ফ্রাই” ও “কাঁকড়া-ফ্রাই” এর রেস্টুরেন্ট আছে। ঘুরাঘুরি করে বিকেলে বা সন্ধ্যায় লেবুর বনের এখানে মাছ/চিংড়ি/কাঁকড়া ভাজি খেতে খেতে সূর্যাস্ত দেখতে পারেন।
আলীপুর বন্দর
কুয়াকাটা থেকে প্রায় চার
কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় একটি মৎস্য ব্যবসা কেন্দ্র
আলীপুর। এ বন্দর থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রলার বঙ্গোপসাগরে যায় মাছ ধরতে।
আলীপুর বন্দর ঘুরে দেখতে পারেন বিভিন্ন রকম সামুদ্রিক মাছের বিশাল আয়োজন। সামুদ্রিক ইলিশের সবথেকে বড় উৎস হচ্ছে এই বন্দর।
বেসরকারি পার্ক
দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে কয়েকটি পার্ক ও রিসোর্ট। বাড়তি আনন্দ, বিনোদন ও খাওয়া দাওয়ার জন্য ঘুরে আসতে পারেন এসব পার্কগুলো।
কোথায় থাকবেন
কুয়াকাটায় প্রচুর হোটেল রয়েছে। ৩০০ থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকার হোটেল পর্যন্ত রয়েছে। একেবারে সী-বিচের কাছে কিছু হোটেল রয়েছে, এছাড়া পর্যটনের হোটেলও আছে। থাকা নিয়ে সমস্যা নাই, যেকোনো হোটেলে আরামে থাকা যাবে।
ইয়ুথ ইন হোটেল, কুয়াকাটা, কলাপাড়া, ☎ +৮৮০৪৪২৮-৫৬০০৮। পর্যটন করপোরেশনের অধীনস্থ হোটেল। কক্ষের সুবিধা: টেলিভিশন, টেলিফোন, গরম এবং ঠান্ডা পানির ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধা। ৳২,০০০-৫,৫০০।
হলিডে হোমস হোটেল, কুয়াকাটা, কলাপাড়া, ☎ +৮৮০৪৪২৮-৫৬২০৮। পর্যটন করপোরেশনের অধীনস্থ হোটেল। কক্ষের সুবিধা: টেলিভিশন, টেলিফোন, গরম এবং ঠান্ডা পানির ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধা। ৳১,০০০-৩,৫০০।
ভালো মানের হোটেল হল হোটেল
বনানী প্যালেস (০৪৪২৮-৫৬০৪২), হোটেল কুয়াকাট ইন (০৪৪২৮-৫৬০৩১), হোটেল নীলাঞ্জনা (০৪৪২৮-৫৬০১৭),
হোটেল গোল্ডেন প্যালেস (০৪৪২৮-৫৬০০৫) ইত্যাদি। এসব হোটেলে ৬শ’ থেকে ২ হাজার..
কী খাবেন
আবাসিক হোটেলগুলিতে অতিথিদের জন্য নিজস্ব রেস্তোরাঁয় খাবার ব্যবস্থা আছে। লেবুর চরের কাঁকড়া ভুনা বেশ বিখ্যাত। বীচ এলাকায় রয়েছে মাছের নানা দোকান, যেখানে আছে টাটকা মাছ ভেঁজে খাওয়ার সুযোগ। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের সামুদ্রিক মাছ ও মাছের শুকটি পাওয়া যায়।
টিপস
১ – কুয়াকাটা থেকে ঢাকার বাস ছাড়ে সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে, ঐ বাস মিস করলে ওইদিন আর ঢাকার মুখ দেখতে হবে না, কাজেই টাইমিংটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২ – ক্যাম্পিং এর জন্য ফাতরার চর ভালো যায়গা, ঐখানে সিকিউরিটি আছে, গঙ্গামতির চর হলো বেস্ট, বাট ঐখানে সিকিউরিটি নাই, ডাকাতের আক্রমণে পড়ার সম্ভাবনা মোর দ্যান ৬০ %
৩-ট্রলারে করে সব জায়গায় যাওয়া যাবে না। আর সময় ও অনেক বেশী লাগবে। সেইক্ষেত্রে বাইক এ করে ঘুরে আসা যেতে পারে। বাইক গুলো ১৫ টা স্পট ঘুরিয়ে আনবে। বাইক এর চালক রাই আপনাকে খুঁজে নিবে। কষ্ট করে তাদের খুঁজতে হবে না। আপনার কাজ শুধু দামাদামি করা। দামাদামি করে ৫০০ টাকার মধ্যেই বাইক ঠিক করা যেতে পারে।
৪- আমতলী থেকে কুয়াকাটা বাসের ছাদে করে যাওয়া উত্তম।। রাস্তার দুইপাশের ছোট-মাঝারি-বড় হরেক আকারের হাজার খানেক পুকুর আপনাকে বিস্মিত এবং মুগ্ধ করবেই ।।
৫ – সাগরে ময়লা ফেলবেন না, আমাদের একটাই মাত্র সাগর – একেও যদি আমরা ঠিকমতন দেখেশুনে রাখতে না পারি তাহলে এর ব্যর্থতাঁর দায়ভার আমাদেরই নিতে হবে, আমরা আচার থেকে শুরু করে যাই খাই না কেনো, সবকিছুর প্যাকেট নিয়ে আসবো, একটা কনাও সাগরে ফেলবো না। এই সাগর আমাদের, একে পরিষ্কার রাখার দায়িত্বও আমাদের...
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
১) পটুয়াখালি সদরঘাটে নেমেই আপনি কয়েকটি হোটেল পাবেন যেখান থেকে সকালে নাস্তার পর্বটা সেরে নিতে পারেন।
২) ঢাকা থেকে ডেকে করে লঞ্চে পটুয়াখালী যেতে আপনার ২০০ টাকা খরচ পড়বে। কেবিনের চাইতে ডেকে করে যাওয়াই ভালো (যারা আয়েশিভাবে যেতে অনিচ্ছুক)। কেবিনগুলো যে তলায় থাকে তার সামনের (লঞ্চের সামনের দিকে) দিকের খালি যায়গাতে বসে-ঘুমিয়ে রাত পার করতে পারেন। সাথে করে চাদর বা স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে গেলে ভালো হয়। রাতে খানিকটা ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। রাতে চাঁদের আলোয় নদীর রূপ অনেক বেশি মোহনীয় হয়ে ওঠে। তারাভরা আকাশটাও সুন্দরভাবে উপভোগ করা যায়।
৩) পটুয়াখালি বাসস্ট্যান্ড থেকে কুয়াকাটায় সরাসরি বাস সার্ভিস চালু আছে। ডাইরেক্ট সার্ভিস বললেও এটা আসলে লোকাল সার্ভিস মানে দাঁড়িয়ে লোক নেয়। ভাড়া ১৪০ টাকা। যাত্রাপথে তিনটি ফেরি পার হতে হয়। ফেরির অপেক্ষায় ১ ঘন্টা বা তার কিছু বেশি সময় নষ্ট হতে পারে। অবশ্য নদীর উপর সেতুর কাজ চলছে। এটি সমাপ্ত হয়ে গেলে সরাসরি কোনো ঝামেলা ছাড়াই কুয়াকাটা পৌঁছানো সম্ভব হবে। মোটর সাইকেলে করে যেতে চাইলে অবশ্য অবশ্যই দরদাম করবেন। কারণ এখানকার মোটর সাইকেল চালকদেরকে আমার সুবিধের মনে হয়নি। তারা অনেক বেশি পকেট কাটায় ওস্তাদ। আর তাদের নিজেদের একটি সিন্ডিকেট আছে। সবাই বেশ জোটবদ্ধ থাকে।
৪) কুয়াকাটার হোটেলের খাবারের স্বাদ আমার কাছে খুব একটা ভালো মনে হয়নি। এর চাইতে কক্সবাজারের খাবার হোটেলগুলো অনেক ভালো। এদের রান্না ভালো হয়নি। তবে লেবু বাগানে মশলা দিয়ে কাঁকড়া ভাজা খেয়েছিলাম। ওটা দারুণ লেগেছিল। বলতে গেলে হোটেলের চাইতে ওটাই বেস্ট ছিল (যদিও আমি জীবনে প্রথমবারের মতো কাঁকড়া খেয়েছি)।
৫) কুয়াকাটা পৌঁছবার পর হাঁটতে গেলেই মোটর সাইকেলের চালকরা আপনাকে ছেঁকে ধরবে তাদের সেবা নেবার জন্য। এক্ষেত্রে কৌশলী হওয়া প্রয়োজন। অনেকে সারাদিন বিভিন্ন স্পটে ঘুরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন অংকের টাকা চাইবে। যা চাইবে আপনি মনে করবেন তার অর্ধেক বা সেটির চাইতেও কম টাকায় আপনি ঘুরে আসতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভেঙে ভেঙে যেতে হবে। যারা পয়সা বাঁচাতে চান তারা এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। যেমন- আমি যখন কুয়াকাটা যাই তখন একজন মোটর সাইকেল চালক কুয়াকাটা হতে বরগুনার টেংরাগিরি ইকোপার্কে যেতে ১৮০০ টাকা চাচ্ছিল। তার বর্ণনা অনুযায়ী সেটা যৌক্তিকও মনে হয়েছিল। তবে রাখাইন বাজারে থাকা কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট সেন্টারে গিয়ে খবর নিয়েছিলাম। ওখানে কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার ভাইয়ের পরামর্শমতো আমরা ভেঙে ভেঙে বরগুনার টেংরাগিরি ইকোপার্কে গিয়েছি। ভাড়া পড়েছে জনপ্রতি মাত্র প্রায় ২৫০ টাকা। বুঝেন এবার অবস্থাটা!
৬) কুয়াকাটায় আগত ট্যুরিস্টদের সকল প্রকার তথ্য দিয়ে সহায়তার জন্য সম্পূর্ণ অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার নাম হলো “কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট সেন্টার”। প্রতিষ্ঠানটি আপনাকে ভালো ভালো তথ্য দিতে পারবে। অন্তত আপনি এদের পরমার্শ নিলে কোথাও ঠকবেন না। এজন্য রুমান ইমতিয়াজ তুষার ভাইয়ের সাহায্য নিতে পারেন (সভাপতি-কুয়াকাটা প্রেসক্লাব, ম্যানেজিং ডিরেক্টর-কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট সেন্টার, ফোন : ০১৭১১১১৩৪১২, ০১৯২৩৮৯২৭৩২)।
৭) কুয়াকাটা ঘুরার জন্য বাইক হলো দ্রুত ও স্বাচ্ছন্দ্যের বাহন। তবে দরদাম করবেন।
Post a Comment